ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পানি সংকটে চিংড়িঘেরে মড়কের আশঙ্কা, আতঙ্কে চাষীরা

চকরিয়ায় চিংড়িঘেরে পানি চলাচলের খালে মাটির বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের হিড়িক

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদের পশ্চিম বড়ভেওলা মৌজার কাকাড়াদিয়া ডেবডেবি এলাকার মধ্যখানে প্রবাহিত জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন একটি চলাচলের শাখাখালে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে চিংড়িঘের তৈরীর হিড়িক পড়েছে। এভাবে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি চলাচলের খালটি দখলে নিয়ে মাঝপয়েন্টে মাটির বাঁধ দেয়ার কারণে চিংড়িজোনের কমপক্ষে হাজারো চিংড়িঘেরে লবণাক্ত পানি ঢুকানো নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। এতে লবণাক্ত পানির সংকট তৈরী হলে চাষের ভরমৌসুমে মৎস্যঘের গুলোতে মড়কের আশঙ্কা করছেন চাষীরাসহ সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় স্থানীয় চিংড়িঘের মালিক ও চাষীদের মাঝে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগী ঘের মালিক ও চিংড়িচাষীরা অভিযোগ তুলেছেন, গেল তিনমাস ধরে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল সরকারি খালটি দখলে নিয়ে মাঝপয়েন্টে মাটির বাঁধ দিয়ে ঘের নির্মাণের প্রচেষ্ঠা চালিয়ে গেলেও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর অথবা জেলা প্রশাসন জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে জড়িতরা আরও বেপরোয়া হয়ে খালে মাটির বাঁধ তৈরী কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

স্থানীয় চিংড়িঘের মালিক ও চাষীরা অভিযোগ করে বলেছেন, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুন নবী নামের একব্যক্তির নেতৃত্বে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র কয়েকমাস ধরে থেমে থেমে স্কেভেটর গাড়ি দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণপুর্বক পশ্চিম বড়ভেওলা মৌজার ডেবডেবি পা কাটা খালটি দখলে নিয়েছে। পাশাপাশি খালের আশপাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন বিপুল পরিমাণ জায়গাও দখলে নেমেছে অভিযুক্ত মহলটি। বর্তমানে সেখানে তাঁরা চিংড়িঘের তৈরী শুরু করেছে।

ঘের মালিক ও চাষীদের দাবি, এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে চলতি জুন মাস পর্যন্ত সরকারি চলাচলের খালটি দখলে নিয়ে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে অভিযুক্ত নুরুন নবীর নেতৃত্বে ওই চক্রটি। সর্বশেষ শুক্রবার (৩জুন) খালের মধ্যখানে নতুন মাটির বাঁধ দিয়েছে অভিযুক্তরা। এ অবস্থার কারণে খালে সামুদ্রিক লবণ পানি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে ডেবডেবি ও কাকাড়াদিয়া এলাকার কমপক্ষে হাজারো চিংড়িঘেরে লবণাক্ত পানি ঢুকানো নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে চাষের ভরমৌসুমে লবণাক্ত পানির সংকটে মৎস্যঘের গুলোতে মড়কের আশঙ্কা করছেন চাষীরাসহ সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি খালে মাটির বাঁধ দিয়ে সামুদ্রিক লবণ পানি চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় অনুকুলস্থলের চিংড়িচাষী মোহাম্মদ এহেছানসহ বেশ কয়েকজন চাষী ইতোমধ্যে অভিযুক্তদেরকে বাঁধাও দিয়েছেন। এতে উল্টো বাঁধা দানকারী ঘের মালিক ও চাষীদেরকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছে অভিযুক্তরা। বিষয়টি নিয়ে ইতোপুর্বে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

চিংড়িচাষীরা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেয়ার পর কিছুদিন খালে বাঁধ দেয়া বন্ধ রাখলেও সম্প্রতি নসয়ে পুনরায় একই অপর্কম শুরু করেছেন অভিযুক্ত প্রভাবশালী মহলটি। এঅবস্থায় বিষয়টির আলোকে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে গত ৫ জুন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযোগটির বাদি চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটার পুর্বপাড়ার বাসিন্দা মৃত মোস্তাক আহমদের ছেলে মোহাম্মদ এহেছান নামের এক ভুক্তভোগী চিংড়িচাষী। এতে বিবাদি করা হয়েছে উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ২নং ব্লক নতুনঘোনা এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে নুরুন্নবী গংকে।

বাদি চিংড়িচাষী মোহাম্মদ এহেছান দাবি করেন, চকরিয়া উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলা মৌজার ডেবডেবি ও কাকড়াদিয়া এলাকার পা কাটা নামক খালটি সরকারি শাখাখাল। এ খালটি দিয়ে যুগ যুগ ধরে সামুদ্রিক লবণ পানি প্রবাহিত হয়ে আসছে। মুলত খালের লবণপানি নিয়ে ডেবডেবি ও কাকড়াদিয়া এলাকার চিংড়িঘেরগুলোতে মৎস্য চাষ করা হয়। কিন্তু কয়েকমাস ধরে অভিযুক্ত নুরুন্নবী গং মাটি কেটে খালের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে চিংড়িঘের তৈরী করছে।

পাশাপাশি অভিযুক্তরা আশপাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘেরের জায়গাও দখলের চেষ্ঠা চালাচ্ছে। তাদের অনিয়ম অপর্কমের কারণে বর্তমানে খালের লবণ পানির সুবিধা বঞ্চিত হবে স্থানীয় চিংড়িঘের গুলো। এতে ঘেরগুলোতে লবণ পানির সংকট তৈরী হলে মড়কের মতো প্রার্দুভাবের আশঙ্কাও রয়েছে। এতে চাষীরা বিপুল ক্ষতিসাধাণের মুখে পড়বে।

বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, উপজেলার পশ্চিম বড়ভেওলা মৌজায় সরকারি খালে মাটির বাঁধ দিয়ে চিংড়িঘের তৈরী করার চেষ্ঠা করছে একটি মহল। এইধরণের অভিযোগ আমাকে একজন জানিয়েছে। ব্যাপারটি নিয়ে আমি ওয়াকিবহাল। তিনি বলেন, তদন্তসাপেক্ষে ঘটনায় জড়িতদর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সরকারি খাল আগের মতো পানি চলাচল উন্মুর্থ করা হবে।

 

পাঠকের মতামত: